আশির দশক থেকে উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় লবন পানির চিংড়ী চাষ হয়ে আসছে। প্রথম দিকে সনাতনী পদ্ধতিতে চিংড়ী চাষে লাভবান হলেও বর্তমানে সনাতনী পদ্ধতি খুব বেশী কার্যকর নয়। এ অবস্থার মধ্যে উপজেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় জলবায়ু সহনশীল বাগদা সেমি-ইনটেনসিভ দলগত চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। এসব কথা গুলি বলছিলেন উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউপির পাশের্^খালী বাগদা আহরণ অনুষ্ঠানে চিংড়ী চাষিরা। বাগদা সেমি-ইনটেনসিভ গ্রুপ সভাপতি সাজিদা বেগম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিষ্টার, সদস্য ইন্দ্রানী ব্যাপারী,রোমিছা পারভীন বলেন মৎস্য অধিদপ্তর , জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহায়তায় সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করে তিন মাস আঠাশ দিনে তিন বিঘা জমিতে বাগদা আহরণ হয়েছে ছয় শত বিশ কেজি। প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে অবকাঠামো,জমির লিজ বাবদ খরচ, মাছের খাদ্য, মাছের পোনা ক্রয়, মেডিসিন, বিদ্যুৎ বিল ,শ্রমিকের মজুরী সহ অন্যান্য খরচ দিয়ে মোট তিন লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। মাছ বিক্রীর পর পাওয়া যায় তিন লক্ষ সত্তর হাজার টাকা। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে চলতি বছরের জুলাই থেকে মাছের পোনা ছাড়া হয় এবং অক্টোবর মাসের আঠাশ তারিখে বাগদা আহরণ করা হয়।
গ্রুপ সভাপতি সাজিদা বেগম বলেন তাদের গ্রুপে সদস্য সংখ্যা পঁচিশ জন।এর মধ্যে নারী বার জন ও পুরুষ তের জন। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবকিছু করেন। এমনকি প্রকল্পে মাছ চুরির ভয়ে পর্যায়ক্রমে তারা রাত জেগে পাহারাও দেন। নিয়ম মেনে মাছের খাদ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভাগাভাগি করে নেন। সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই প্রকল্প এবং সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে বাগদা চাষ সম্পর্কে সকলকে কয়েকবার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মৎস্য দপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক, জেলা কর্মকর্তা সহ অন্যান্য কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে জানান এবং এই প্রকল্পের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পাশ^বর্তী আরও একটি বাগদা সেমি-ইনটেনসিভ দলভিত্তিক চাষ কার্যক্রম করবেন বলে জানান।
সরজমিনে দেখা যায় বাগদা সেমি-ইনটেনসিভ প্রকল্পে সনাতনী পদ্ধতি থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে চাষ । নিয়ম মেনে ট্রেতে মাছের খাদ্য প্রদান, মাঝে মাঝে মাটি ও পানি পরীক্ষা, পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ করা, প্রকল্পে প্রবেশ করা ও ঘেরের পানিতে নামার পূর্বে পটাসিয়াম ব্যবহার করা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সহ অন্যান্য নিয়মাবলী মেনে চলা হয়। এ সকল কাজে সহায়তা করেছেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক, এফএও প্রতিনিধি, ফিল্ড ফ্যাসিলেটিটর ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
শুক্রবার প্রকল্পের বাগদা আহরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পুলকেশ মন্ডল। তিনি প্রকল্পের কার্যক্রম দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং আগামীতে এই এলাকায় অন্যান্য প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে চেষ্টা করবেন বলে মৎস্য চাষিদের জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার বিশ^াস, প্রকল্প পরিচালক সমীর কুমার সরকার, এফএও প্রতিনিধি ড.মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ সাজেদুর রহমান, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্যামনগর তুষার মজুমদার, ফিল্ড ফ্যাসিলেটিটর মেহেদী হাসান,মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা প্রকল্পের চাষিবৃন্দ প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউপির পাশের্^খালী গ্রামে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহায়তায় কমিউনিটি বেইজড কাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ এন্ড অ্যাকোয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রকল্পটি মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়।
ছবি- শ্যামনগরের পাশের্^খালী এফএও এর সহায়তায় সেমি-ইনটেনসিভ প্রকল্পে বাগদা আহরণ কার্যক্রম।