◾ নিউজ ডেস্ক


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনসমাগম কাকে বলে তা আগামীকাল থেকে বিএনপিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।


শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।


বিএনপির তিনটি সমাবেশ দেখেই সরকারের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে সরকারের কাঁপাকাঁপির কী আছে? কোনো কোনো সমাবেশে ১০ লাখের টার্গেট করেও ১ লাখ হয়নি, আবার কোথাও ৫ লাখ টার্গেট করে ১ লাখের অর্ধেকও হয়নি। এটাই তো বিএনপির সমাবেশের চেহারা।’ 


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরী, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনে কত হাজার লোক হয়েছে তা দেখুন, যা পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। খেলা হবে—প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে বলেছি। খেলা হবে হাওয়া ভবন, লুটপাট, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে, খেলা হবে দুর্নীতি, বিদ্যুৎহীন খাম্বার বিরুদ্ধে।


তিনি বলেন, খেলা হবে সোয়া ১ কোটি ভুয়া ভোটার সৃষ্টিকারী, ভোট চুরি আর জালিয়াতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে দেশের উন্নয়নবিরোধীদের বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির লালনপালনকারীদের বিরুদ্ধে, খেলা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের বিরুদ্ধে।


নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে কোনো নির্বাচন হবে না—বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতার মানদণ্ড কী? সেটার প্রমাণ তো আপনারা ক্ষমতাসীন হয়ে বারবার দেখিয়েছেন। বিএনপির নেত্রীই তো একসময় বলেছিলেন পাগল আর শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়, তাহলে আপনারা কি পাগল ও শিশু দ্বারা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চান?


তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে অন্ধ বিএনপি নেতারা সেটাই চাইতে পারেন।ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন রয়েছে, যার অধীনে যথাসময়ে আগামী নির্বাচন হবে, সরকার শুধু নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবে।


নির্বাচন কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা কোনো দলের খেয়ালখুশিমতো হবে না, এমনটা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, একইভাবে বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে।


ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের রিজার্ভ নিয়ে বিএনপি কথা বলে কোন মুখে, এটা জনগণের প্রশ্ন।


তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রিজার্ভের টাকা সরকার গিলে ফেলেছে নাকি আমদানি ব্যয়ে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণে ব্যয় করেছে? রিজার্ভের টাকা তো গিলে ফেলেছেন ফখরুল সাহেবরা।


তিনি আবারও বিএনপি মহাসচিবের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, রিজার্ভ কত রেখে গিয়েছিলেন মনে আছে? যখন ক্ষমতা ছেড়েছেন তখন যা রেখে গিয়েছিলেন, তা ৫ বিলিয়নেরও কম।


বিএনপি আমলে রিজার্ভ তো শূন্যই ছিল, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ উঠেছিল।


ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ বৈশ্বিক সংকটের কারণে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৩৬ বিলিয়নে এসে ঠেকেছে। এ সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, দুনিয়ার সব উন্নত দেশ হিমশিম অবস্থায় রয়েছে।


বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাস সরকার আমদানি করতে পারবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবহন ধর্মঘটের জন্য মালিক-শ্রমিকদের প্রতি উপদেশ বর্ষণ করা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০১৩-১৪ সালে যখন শত শত গাড়ি বিএনপি ভাঙচুর করেছিল, পেট্রোল নিক্ষেপ করে গাড়ি ও পরিবহন শ্রমিকদের পুড়িয়ে মেরেছিল। পরিবহনশ্রমিকদের রিজিকের ওপর হাত দিয়েছিল এবং মালিক-শ্রমিক পরিবারকে নিঃস্ব করেছিল, তারা সেটা এখনও ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি বিএনপির সেই আগুনসন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি।


তিনি বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নির্দিষ্ট কোনো দলের নন, এখানে সব দলেরই লোক আছেন।


ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের স্মরণ করে দিয়ে বলেন, পরিবহন মালিক সংগঠনের সভাপতি আওয়ামী লীগের, সাধারণ সম্পাদক বাসদের, বিএনপির বড় নেতা শিমুল বিশ্বাসও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন কেন ধর্মঘট করেছেন?


সব দলের সমন্বয়ে মালিক সমিতি, সেখানেও প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন জাতীয় পার্টির, জেনারেল সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ সমর্থিত, অন্য সব দলেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।


বিএনপি নেতাদের তাদের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের জিজ্ঞাসা করুন কেন তারা আপনাদের ভয় পান, কেন ২০১৩-১৪ সালের দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি, তাদের জিজ্ঞাসা করুন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024