নানান বয়সের মানুষ সাগরের নোনাজলে গোসলে নেমেছেন। কেউ সৈকতে ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছে, কেউ আবার ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে সৈকত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) গা এলিয়ে দিগন্তছোঁয়া নীল জলের রাশিতে মজে আছে। কেউ কেউ বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনদের এসব আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখছে। নববর্ষের দিনে সমুদ্রকে এভাবেই রাঙাতে, আনন্দে মজতে দেখা গেছে পর্যটকদের।

সকালে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করা হয়েছে। তাই রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে লাখো পর্যটকের পদচারণা ঘটতে থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। পর্যটন সূত্র জানিয়েছে, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে কক্সবাজারে অবস্থান করছে অন্তত দুই লাখ পর্যটক।

সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে পর্যটক আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল থেকে কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতে অন্তত লাখো দর্শনার্থী জড়ো হয় বলে জানিয়েছেন সৈকতে দায়িত্বরত কর্মীরা।

শহরের বাইরেও পর্যটকরা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এ সড়কে সৈকত ছাড়াও আছে পাহাড়-ঝর্ণা, প্রাকৃতিক গুহাসহ নানা দর্শনীয় স্থান। এছাড়া সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়া, রামু বৌদ্ধবিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের প্রবল আগ্রহ থাকলেও নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে যেতে পারছে না দর্শনার্থীরা।

সিলেট থেকে আসা পর্যটক সোহানুর রহমান সাগরে নেমেছেন স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে। কোমর সমান পানিতে ভাসছেন টিউবে, সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জেটস্কি নিয়ে। আধা ঘণ্টা পর বালুচরে উঠে বসেন চেয়ার-ছাতা কিটকটে। মাজহার নামের আরেক পর্যটক বলেন, ঈদ আর নববর্ষের ছুটিতে নোনাজলে শরীর ভেজাতেই কক্সবাজারে ছুটে আসা।’

কলাতলীর হোটেল বে-ম্যারিনার ম্যানেজার রফিক উল্লাহ জানান, ঈদের পরদিন থেকে হোটেলের প্রায় সব রুম বুকিং হচ্ছে। তবে পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে গরম আবহাওয়া। তার পরও প্রচুর মানুষ কক্সবাজারে এসেছে। প্রতিষ্ঠান ও অফিস খুললে চাপ কমে যাবে।

হোটেল স্যান্ডি ও রেস্টুরেন্টের পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘একদিকে ঈদের ছুটি ও পহেলা বৈশাখের কারণে পর্যটন নগরীতে প্রচুর পর্যটক আসছে। তাদের সাধ্যমতো সেবা দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা বলেন, ‘পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। হোটেল-মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। পর্যটকরা এবার ভিন্ন কক্সবাজার দেখতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর জন্য ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘হোটেলে কক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেয়া আছে। অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না হয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পৃথক কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। হোটেলে কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024