|
Date: 2024-04-08 02:10:54 |
বিশ্বের নবমতম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা আজ রোববার সকালে ঢাকা সফরে আসছেন। কূটনীতিকরা বলছেন যে বাংলাদেশ-ব্রাজিল দুপক্ষের মধ্যে নতুন সম্পর্কের সূচনা করতেই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসছেন। এই সফরে দুপক্ষের মধ্যে কারিগরি, প্রতিরক্ষা এবং কৃষি সহযোগিতাসহ একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার সফর-সূচি থেকে জানা গেছে, আজ সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পররাষ্ট্র সচিব ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানাবেন। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর যাবেন। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুপুরে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রাজিলের মন্ত্রী।
এরপর আজ রোববার বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা। বৈঠক শেষে দুই পক্ষের মধ্যে কারিগরি, প্রতিরক্ষা এবং কৃষি সহযোগিতাসহ একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। পরদিন সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ব্রাজিলের মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গাজীপুরে বেক্সিমকো এবং স্কয়ারের শিল্প কারখানা পরিদর্শন করবেন। এরপর বণিক সমিতি এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রাজিলের মন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে তার। ঢাকা সফরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার রাতে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা একটি বড় ডেলিগেশন নিয়ে ঢাকা আসছেন। তার সফরে কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি সই হবে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা, কৃষি এবং ক্রীড়া বিষয়ে সহযোগিতামূলক সমঝোতা স্মারক সই হবে। তবে শেষ মুহূর্তে জানা গেছে শুধু কারিগরি বিষয়ক চুক্তি হবে। বাকিগুলো পরবর্তী সময়ে হবে।
নবম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) হচ্ছে ১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যে কারণে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারভিত্তিতে ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রফতানি ইস্যুতে সম্পর্ক নিবিড় করতে চায়। সম্পর্ক নিবিড় করতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ব্রাজিল সফর করেছেন। ২০২২ সালে দুই পক্ষের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্রাজিল সফর করেন। ওই সফরে সরকারি পর্যায়ে ভিসামুক্ত যাতায়াত নিশ্চিতে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত অক্টোবরে পররাষ্ট্র সচিব ব্রাজিল সফর করে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক করেন। তার আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দুই পক্ষের বণিক সমিতির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ব্রাজিল থেকে পশু ও মুরগি খাত বিষয়ক ৫ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তুলা ইস্যুতে ব্রাজিলের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ-ব্রাজিল দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই পক্ষের মধ্যে ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। বাংলাদেশ হচ্ছে ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা এবং চিনি, সয়াবিন ও সয়াবিন তেলের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্রাজিল থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের চিনি ও চিনিজাত দ্রব্য, ৪৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলা, ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সয়াবিন এবং ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সয়াবিন তেল আমদানি করেছে। অন্যদিকে ওই অর্থবছরে ব্রাজিল বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কার্পেট ও গৃহস্থালি পণ্য, সিরামিকস, আসবাব এবং চামড়া পণ্য আমদানি করেছে।
বাংলাদেশ ব্রাজিলে তৈরি পোশাক খাতের যে পণ্য রফতানি করে তাতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। ঢাকা চেষ্টা করছে এই শুল্ক কমিয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসতে। এ ছাড়া ব্রাজিলের বাজারে অশুল্ক বাধা, বিভিন্ন ধরনের কর, বিমান ও জাহাজে পণ্য রফতানিতে করসহ একাধিক জটিলতা রয়েছে।
যেখানে ঢাকা ব্রাজিল থেকে তুলা আমদানিতে ব্রাজিলকে ছাড়া দিয়ে থাকে। ঢাকা আশা করছে যে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরে এসব বাধা দূর হবে এবং দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও নিবিড় হবে। বাংলাদেশ ব্রাজিলে তৈরি পোশাক পণ্য, পাট এবং ওষুধের বাজার ধরতে চায়। পাশাপাশি ব্রাজিলের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি অথবা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। যা ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরে ইস্যুটি এগিয়ে যাবে বলে ঢাকার কূটনীতিকরা প্রত্যাশা করছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। আমাদের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সাউথ আমেরিকা এক্সপ্লোর ওয়াইডলি। ব্রাজিল বড় দেশ। তাদের বায়িং ক্যাপাসিটি হাই। আমাদের থেকে অনেক কিছু রফতানির সুযোগ আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যে ঢাকা সফরে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।পাশাপাশি ব্রাজিলের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। যা হবে প্রথমবারের মতো ব্রাজিল থেকে কোনো উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর। এই সফর হবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাইলফলক। এর মাধ্যমে সম্পর্ককে আমরা মজবুত করতে পারব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। এই সফরে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন পালক যুক্ত হবে। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে গেলে দু’পক্ষের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হবে।
© Deshchitro 2024