কক্সবাজার শহর ও সদর উপজেলা থেকে পৃথক পৃথক ঘটনায় একদিনে এক শিশু, এক কিশোর এবং এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।


এরমধ্যে নিখোঁজের একদিন পর শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি গ্রামের স্লুইচ গেইট এলাকার একটি পুকুর থেকে ৪ বছর বয়সী আবিদ নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে আবিদ নিখোঁজ হয়। তবে পরিবারের দাবী আবিদকে অপহরণ করা হয়েছিল।

নিহত আবিদ ঐ এলাকার মো. ইসহাকের ছেলে।



স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পিএমখালীর জুমছড়ি এলাকায় স্লুইসগেইটের পাশে একজন কৃষক ভাসমান অবস্থায় শিশুর লাশটি দেখতে পায়। পরে তিনি এলাকাবাসীকে জানান।


আবিদের মামা বদিউল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আবিদকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি ও মাইকিং করা হয়। এরপর মুঠোফোনে কল করে এক লোক রাত ৮ টার দিকে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে লিংকরোড এলাকায় যেতে বলে। পরে সেই স্থানে গেলে ওই ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।


অপরদিকে শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে কক্সবাজার শহরের হোটেল সিগালের ৩০৮ নম্বর কক্ষ থেকে গাজী এম শওকত হাসান (৫০) নামক এক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।



তিনি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের অশোক তলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ও সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা।


ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, গাজী এম শওকত হাসান গত ৩০ জানুয়ারি গ্রুপ ট্যুরে কক্সবাজার আসেন। হোটেল সিগালের তৃতীয় তলার নিজ কক্ষে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে থাকলে তাকে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ২ টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে দাদীকে বাঁচাতে গিয় খুন হন নাতি আলাউদ্দিন (১৫)। তিনি একই এলাকার ইমরান হোসেনের ছেলে।



প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নিহতের দাদী একজন চায়ের দোকানদার। ওই দোকানে প্রায়শঃ চা নাস্তা খেয়ে টাকা পরিশোধ করেনা এলাকার কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল কিশোরদল। বৃহস্পতিবার রাতে এমন ঘটনা ঘটে। ওই সময় বিল চাওয়ায় বখাটেরা বৃদ্ধ নারীকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আলাউদ্দিন এগিয়ে আসলে তাকেও হামলা করে।


নিহতের দাদী জানান, চায়ের বিল চাওয়ায় কুতুবদিয়া পাড়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফজলের নেতৃত্বে,আবুল হাসান,মুবিন, মেহেদি প্রথমে আমাকে ও পরে আমার নাতি আলাউদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।


নিহতের বাবা ইমরান হোসেন জানান, খুনিরা খুবই ভয়ংকর। এরা আমার ছেলেকে হত্যার পর থেকে আমার ভাইকে খুনের হুমকি দিচ্ছে।



এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ( তদন্ত) কায়সার হামিদ বলেন, পৃথক পৃথক তিনটি ঘটনায় পৃথক পৃথক স্থান থেকে একদিনে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু আবিদের মৃতদেহে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। আর লাশটি বসত বাড়ি থেকে প্রায় ১ কি.মি.দূরের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, নিহতের পরিবার লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার বিকেলে আমাদেরকে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছেন। মুক্তিপণ চাওয়া ও পুকুরের দুরত্বের বিষয় দুটি গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত কাজ পরিচালনা করছে।


পর্যটকের লাশ উদ্ধার প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।



গ্যাংয়ের হাতে কিশোর খুনের বিষয়ে ওসি (তদন্ত) বলেন, হত্যাকান্ডের মূলহোতা মুবিনকে র‍্যাব আটক করেছে তবে এখনো আমাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। এছাড়া এই চক্রের অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024