|
Date: 2024-01-25 14:17:00 |
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানকে বদলী করা হয়েছে। তাকে পাঠানো হয়েছে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটায়। তার পরিবর্তে সাতক্ষীরা সদরে বদলী হয়ে আসছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র মন্ডল। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সারাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষকদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ঠি করা হয়েছে নতুন নতুন বিভিন্ন পদ। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নতুন নতুন ভবনসহ প্রতিবছরই দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রকল্প। এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নতুন ও শূণ্য পদে নিয়োগসহ বিভিন্ন খাতকে টার্গেট করে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা গড়ে তুলেছে প্রতারণা জাল জালিয়াতির নিত্য নতুন কৌশল। আর সবকিছুর সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এবং নামধারী সাংবাদিকদের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র। সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু শপথ গ্রহণের পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কিত কঠোর বক্তব্য দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা হয় গভর্নিং কমিটির মাধ্যমে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় নিয়োগ বানিজ্যসহ সরকারী বিভিন্ন অনুদান নিয়ন্ত্রণ করতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে। যেখানে নিজেদের লোকজন নেই সেখানে নেওয়া হয় অভিনব কৌশল। কোন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ বোর্ড গঠনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলার সাথে সাথে তাদেরকে নিদিষ্ট জনপ্রতিনিধিকে দেখিয়ে বলে দেওয়া হয় ওনার অনুমতি ছাড়া তারা নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিদিষ্ঠ জনপ্রতিনিধির কাছে যেতে চাইলে আগে তাকে ঐ জনপ্রতিনিধির চ্যালা চামচাদের সাথে কথা বলতে হয়েছে। তারপর তাদের সাথে দফারফা করে যেতে হয়েছে জনপ্রতিনিধির কাছে। সেক্ষেত্রেও জনপ্রতিনিধির ভাই বোন আত্মীয় স্বজনদের সন্তুষ্ঠ করে করাতে হয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তাকে টেলিফোন। এরপর দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা তার চাহিদামত উৎকোচ পরিশোধ করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ঠ না হলে পাঠিয়ে দিয়েছেন তার অনুগত সাংবাদিক বাহিনী। হাতে টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ব্যবহৃত মাইক্রোফোনসহ ৪/৫ জনের নামধারী সাংবাদিক দল বেধে ছুটে গেছে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে। সেখানে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে মারমুখি আচারণ করেন তারা। তারপর প্রতিষ্ঠান প্রধানের সামনেই কথা বলেন সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে।
সূত্র জানায়, এরপর শিক্ষা কর্মকর্তা তার পক্ষে ঐ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বোর্ডে যাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে দেন। এবার আবার শুরু হয় ঐ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার পালা। তিনি ম্যানেজ হওয়ার পর আবার বলে দেন ঐ সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে। ফলে সেখানেও দিতে হয় কম বেশি টাকা।সাতক্ষীরার একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, গত ১ জানুয়ারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। প্রথম দিনে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অনুপুস্থিত থাকায় তাদের বইগুলো স্কুলে সংরক্ষিত থাকে। এ বিষয়টি জানতে পেরে একজন অনলাইন সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানটিতে হাজির হন এবং লাইভে বিষয়টি প্রচার করেন। এরপরপরই সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা ঐ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সাসপেন্ড করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নেন। তিনি ঐ অনলাইন সাংবাদিককেও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্দেশ দেন।
সাতক্ষীরা সদরের বল্লী হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এক সাবেক সদস্য বলেন, গত দুই বছরে স্কুলটিতে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ থেকে এক লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের এমপির কোটা থেকে প্রথমে ৫০ হাজার, পরে এক লাখ এবং সর্বশেষ দুই লাখ টাকা অনুদান পাওয়া যায়। উক্ত সাড়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যে ২৫ হাজার টাকার কাজ করে সব টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটরসহ ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। এরমধ্যে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১৫ লাখ টাকা, অফিস সহায়ক জমিদান বাদে নগদ ৪ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১০ লাখ টাকা এবং আয়া পদে ১০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে এবং সেই টাকা দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। তিনি আরো বলেন স্কুলে সকল শিক্ষক বিষয়টি জানেন। কিন্তু কেউ এতদিন মুখ খুলতে পারেনি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরায় কর্মরত সাবেক একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এমপি সাহেবের নির্দেশ ছিল কোথাও নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে হলে আগে তার অনুমতি নিতে হবে। তার অনুমতি মানে আগে তাকে ম্যানেজ করা। কিন্তু এমপির পাশে থাকা লোকজন এক এক জন এক ধরনের রেটের কথা বলায় আমরা বিষয়টা সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানের উপর ছেড়ে দিতাম। তাদেরকে বলাতাম এমপি সাহেব অনুমতি না দিলে আমি যেতে পারবো না। এবিষয়ে আমাদের কি করার ছিল।
© Deshchitro 2024