আশাশুনি উপজেলার চিংড়িঘের মালিকেরা অবৈধভাবে বাঁধ কেটে পাইপ বসিয়ে নদীর লোনাপানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করছেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও পাউবো কর্তৃপক্ষ পাইপ তুলে ফেলা বা সংশ্লিষ্ট ঘেরমালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে দুর্বল বাঁধ আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহজেই ভেঙে যাচ্ছে। আর মানুষ হয়ে পড়ছে গৃহহীন। ঘেরমালিকেরা পাউবোর একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বাঁধ কেটে পাইপ বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাউবোর  কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলা পাউবোর বিভিন্ন পোল্ডারের আওতায় প্রায় ১৮৮ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। ৪ নম্বর পোল্ডারে ৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার, ৭/১ নম্বর পোল্ডারে ৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটার, ৭/২ নম্বর পোল্ডারে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ কিলোমিটার এবং ২ নম্বর পোল্ডারে ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে ২ দশমিক ২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এসব বাঁধের পাশে চিংড়ি চাষ চলছে। আশাশুনি উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলায় পাউবোর বাঁধ কেটে তিন শতাধিক স্থানে পাইপ বসিয়ে বিভিন্ন নদী থেকে পানি তোলা হচ্ছে। এ জন্য ৩০-৪০টির অনুমতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদী থেকে পানি তোলার জন্য পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করতে হবে। তদন্তের পর নির্বাহী প্রকৌশলী পাকা নর্দমা (ড্রেন) তৈরির অনুমতি দেন। কিন্তু সেই নর্দমা এমনভাবে করতে হবে যাতে বাঁধের কোনো ক্ষতি না হয়।কিন্তু বাস্তবে সে নিয়ম কেউ মানছে না। আশাশুনির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে  দেখা গেছে, আশাশুনিরপুঁইজ্বালা,মাড়িয়ালা,

বলাবাড়িয়া,খাজরা,থানাঘাটা,আনুলিয়া,কাদাকাটি,বড়দল,বুধহাটা,বাহাদুর পুর,নওয়াপাড়া,কামালকাটি, ঝাঁপা, চাকলা, চুইবাড়িয়া, পাতাখালী, হরিষখালী, খাজরা, নাগলা, জেলেখালী এলাকার শতাধিক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে যেকোন মুহুর্তে ঝূকিপূর্ন ভেড়িবাধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশাংকা রয়েছে।  ভেড়িবাধ ভাঙ্গলে এলাকার কাচা ঘরবাড়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফসলীয় জমি, গাছপালা মৎস্যঘের সহ জান মালের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। উপজেলার পুঁইজ্বালা গ্রামের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জমিতে তাঁর দুটি চিংড়িঘের রয়েছে। দুটি স্থানে বাঁধ কেটে পাইপ বসিয়ে খোলপেটুয়া নদী থেকে পানি তোলেন তিনি। এর জন্য কোনো অনুমতি নেননি। তবে মাঝেমধ্যে পাউবোর লোক এলে চা-মিষ্টি খাওয়ার খরচাপাতি দেন। তিনি বলেন, আমার মত অনেকেই তাঁর মতো পানি তুলছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, এসব স্থান দিয়ে সারা বছরই অবাধে নদী থেকে নোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত বলে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। তাঁরা আরও বলেন,  ঢাকঢোল পিটিয়ে বাঁধে বসানো অবৈধ পাইপ অপসারণের কাজে নেমেছিল পাউবো। এ জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল চিংড়িচাষিদের। কাজের কাজ কিছু হয়নি। ঘেরমালিকেরা নির্বিঘ্নে তাঁদের কাজ চালিয়ে আসছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বললেও তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।উপজেলার নদীভাঙন কবলিত  এলাকার কৃষকরা  বলেন, নোনা পানির চিংড়ি চাষের প্রভাবে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। বাঁধ ভাঙনের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া পুকুরে মাছ নেই। হাজার হাজার ফলদ ও বনজ বৃক্ষ মরে যাচ্ছে। গ্রামে হাঁস-মুরগি প্রায় বিলুপ্ত হচ্ছে। আর সবজির খেত তো চোখেই পড়ে না। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও মিষ্টি পানির মৎস্যসম্পদ এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। পরিবেশও হুমকির মুখে পড়েছে। যাঁরা অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ কেটে বা ছিদ্র করে নোনা পানির চিংড়ি চাষ করছেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাপ্তরিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বরলেন পাইবো কতৃপক্ষ। দ্রুত বেড়িবাঁধের অবৈধ পাইপ অপসারণ করা হবে।সাংবাদিক সাহেব আলী জানান, বাঁধ কেটে কয়েক শ পাইপ বসানো হলেও অনুমতি রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটির। পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বাঁধ কেটে পানি তোলা হচ্ছে। বিষয়টির প্রতি উদ্ধত্তন কতৃপক্ষের সুনজর কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024