বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারকে পর্যটকবান্ধব করতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন। কক্সবাজারে পর্যটকরা এসে যাতে কোনো হয়রানি ছাড়াই আবার নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সে লক্ষ্যে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব খাতকে ট্যুরিস্ট পুলিশের মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনা হচ্ছে।




এ ছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশের আওতাধীন পর্যটন এলাকায় অটোরিকশা-সিএনজি চালকদের আলাদা পোশাক, আইডি কার্ড ও ভাড়া নির্ধারণ। এবং হোটেল মোটেল জোনে স্থানীয় কিশোরদের প্রবেশ সীমিত করা। পর্যটন সম্পর্কিত সকল স্টক হোল্ডারদের আইডি কার্ড ব্যবহার নিশ্চিত করা। বাসসহ সকল পরিবহনে পর্যটক সচেতনতায় স্টিকার লাগানো। সকল স্টক হোল্ডারদের ডাটাবেজের আওতায় আনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা। বিচে হারানো ও দলছুট শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন এবং ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনা হচ্ছে।




ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটনের উন্নয়নে সবার পজিটিভ মানসিকতা লালন করা উচিত। পর্যটনের ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুরিজম খাতে জড়িত সবার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা কাজ করছি। এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের একটি ইউনিট। ট্যুরিস্ট পুলিশের সকল সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক নিয়োগকৃত। বাংলাদেশ পুলিশ যে সকল কাজ করে, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরাও সেসকল কাজ করতে পারবে। কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। ট্যুরিস্ট পুলিশের কারণে মানুষের মধ্যে ‘সেন্স অব সিকিউরিটি’ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।




কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের কারণে মানুষের মধ্যে সেন্স অব সিকিউরিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকরা বিচে রাত কাটাতেও ভয় পাচ্ছেন না। তাদের মধ্যে একটা ফিলিংস এসেছে যে-আমরা এখানে সেভ, কোন সমস্যা নাই। এছাড়াও বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণের বড় খাত হবে ট্যুরিজম। জিডিপি অর্জনে একদিন এ খাত প্রথম হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে ট্যুরিজম সেক্টর দ্রুত উন্মোচিত হবে।




জিল্লুর রহমান বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজার এই বৃহত্তর পর্যটন এলাকায় সবার সহযোগিতা চাচ্ছি, কারণ ট্যুরিস্ট থাকবে সেই সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশও থাকবে। আমি বিশ্বাস করি ট্যুরিস্ট পুলিশ দেশের ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে পারবে। কক্সবাজারের ট্যুরিজম নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লোকজন মালদ্বীপে বেড়াতে যাচ্ছে। ‘উই আর লার্জেস্ট সী বিচ’এই ফ্লেভারটা যদি এখানে নিয়ে আসতে পারি। সুবিধা যদি দিতে পারি তাহলে অবশ্যই এখানে ফরেন ট্যুরিস্ট অবশ্যই আসবে। সামনে যে প্রকল্পগুলো আসছে, যেমন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নাফ নদীর পাশে নাফস স্পেশাল ট্যুরিজম, সাবরাং-এর পাশে স্পেশাল ট্যুরিস্ট স্টপ। আমি মনে করি, এই এক্সিকিউশনগুলো বাস্তবায়ন হলে রেভিনিউ অর্জনে প্রথম হবে ট্যুরিজম সেক্টর।




তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কক্সবাজারে ট্যরিস্ট পুলিশের জনবল আছে ২১৩ জন। এই জনবল খুব বেশি না হলেও কম না, জাস্টিফাইড সংখ্যা। বিশ্ব চলে যাচ্ছে ডিজিটাল ইকুমেন্টের দিকে। আসলে আমরা ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা চাচ্ছি জনবল কমিয়ে ডিজিটাল ইকুমেন্টের দিকে যেতে, যাতে ইফেক্টিভ লোক দিয়ে ডিজিটাল ইকুমেন্টের যথার্থ ব্যবহার করা যায়। এবং আমি মনে করি, জনবল পর্যাপ্ত। আমাদের দরকার মেন্টাল সেটাপ। আমাদের যে পুলিশ, তারা থানা পুলিশ থেকে এসেছে; এক্ষেত্রে আচরণগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আমার চাওয়া হচ্ছে- রাত তিনটায় কেউ বিচে ঘুরলে ট্যুরিস্ট পুলিশ তার কাছে গিয়ে বলবে- আপনারা ইনজয় করেন যতক্ষণ ইচ্ছা আমরা আছি, যে কোন প্রয়োজনে সহায়তা করব।




পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে ফরেন ট্যুরিস্ট খুবই কম, তবে দ্রুত বাড়বে, নরমালি এখানে কিছু ভারতীয় আসে। কিছু ইউরোপ থেকে আসে তবে খুব কম। এখনকার পরিবেশ, সুবিধা আমরা এখনও বৃদ্ধি করতে পারিনি। আমরা উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক বিমাবন্দর হচ্ছে, ট্রানজিট হলে, রিফিউলিং-এর ব্যবস্থা হলে আশা করি ফরেন ট্যুরিস্ট বাড়বে। এছাড়া ফরেন ট্যুরিস্টের জন্য ডলার এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাও করতে হবে।




ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের‘ হ্যালো ট্যুরিস্ট ’নামে একটি অ্যাপ আছে। এই অ্যাপ দিয়ে পর্যটকদের আমরা লোকেট করার চেষ্টা করছি। তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ে অ্যাপের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে। তবে এটা আরও আপগ্রেড করার চেষ্টা চলছে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024