হবিগঞ্জ-২ আসনের  সংসদ সদস্য ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি  আলহাজ্ব অ্যাড. আব্দুল মজিদ খান এমপি  বলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের শুভ জন্মদিনে তার অমর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। জাতির পিতার নাম স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হওয়ার নেপথ্যে ছিলেন তার প্রিয় সহধর্মিণী। আমৃত্যু নেপথ্যে থেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন এই মহীয়সী নারী। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে বাস্তবোচিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ায় অনন্য ও ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন।


৮ আগস্ট রোজ মঙ্গলবার সকালে বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের শুভ জন্মদিনে তার অমর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও অসহায় দুস্থ মহিলাদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।


তিনি আরো বলেন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জন্মগ্রহণ করেন। আজ তিনি বেঁচে থাকলে ৯৩ বছরে পা দিতেন। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ১২টি বছর বঙ্গমাতা অপরিসীম দুঃখ-কষ্টে সংসারজীবন অতিবাহিত করেছেন। ’৫৪তে তিনি ঢাকায় আসেন এবং গেন্ডারিয়ায় রজনী চৌধুরী লেনে বাসা ভাড়া নেন। ’৫৪তে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু বন ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন গেন্ডারিয়ার বাসা ছেড়ে ৩ নং মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িতে ওঠেন। অল্পদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ৯২-ক ধারা জারি করে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয় এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে।


মাত্র দুই সপ্তাহের নোটিশে বঙ্গমাতাকে বাসা খুঁজতে হয় ও নাজিরা বাজারে বাসা নেন। ’৫৫তে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ও একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু পরিবার ১৫ আবদুল গণি রোডের বাসায় ছিলেন। কিছুদিন পর মন্ত্রিত্ব অথবা দলের দায়িত্ব গ্রহণের প্রশ্ন সামনে এলে বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলীয় সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বঙ্গমাতাকে বাসা বদল করতে হয়। এবার বাসা নেন সেগুনবাগিচায়। এ সময় বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। 


’৫৮-এর ৭ অক্টোবর আইয়ুবের সামরিক শাসন জারি হলে ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবারও বঙ্গমাতা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় বাসা খুঁজতে থাকেন এবং সেগুনবাগিচায় নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে বাসা নেন। পরে সেটি পাল্টে ৭৬ সেগুনবাগিচায় অপর একটি বাড়ির দোতলায় ওঠেন। তখন বঙ্গবন্ধুর নামে ১৪টি মামলা। ’৬১তে বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হয়ে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার ’৬১-এর ১ অক্টোবর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। এই সময় থেকেই ধীরে ধীরে ধানমণ্ডি ৩২ নং-এর বাড়িটি হয়ে ওঠে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে দেখতেন নিজ পরিবারের সদস্যের মতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণও তাই মনে করতেন। নেতা-কর্মীদের বিপদ-আপদে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাদের পাশে দাঁড়াতেন পরম হিতৈষীর মতো। মমতা মাখানো সাংগঠনিক প্রয়াস নিয়ে কর্মীদের হৃদয় জয় করে নেয়ার ব্যতিক্রমী যে ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ছিল, সেই চেতনার আলোয় আলোকিত ছিলেন বঙ্গমাতা।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার  পদ্মাসন সিংহের সভাপতিত্বে ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্ত সুদীপ দেবের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার, বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ  দেলোয়ার হোসাইন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুল হক, আলিয়া মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আতাউর রহমান, জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি প্রফুল্ল চন্দ্র বৈষ্ণব, বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা মোঃ শাহিবুর রহমান, বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি জীবন আহমেদ লিটন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রধান, পিআইও মলয় কুমার দাস প্রমুখ।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024