|
Date: 2023-07-19 02:46:23 |
◾ আকিব হোসাইন : বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু। তাই বৃক্ষরোপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণও বটে। বৃক্ষ আমাদের বিভিন্ন দিক থেকে উপকার করে থাকে। যেমন, বৃক্ষ থেকে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি, বৃক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি, ঘরবাড়ি তৈরি করতে গাছের কাঠ, বিভিন্ন ফুল গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ, ফল গাছ থেকে মৌসুমি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধও সংগ্রহ করা যায়। যা দিয়ে দেহের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পেয়ে থাকি। তাছাড়া বৃক্ষ পরিবেশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তা মানবজীবনে তাৎপর্যবহ। একদিকে কেউ কেউ নার্সারি করার মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে, একশ্রেণির মানুষ বিনা কারণে গাছ কেটে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যা পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবছর ৫ই জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' পালিত হয়। শুধু নিজ দেশে নয় বরং বিশ্বের প্রতিটি দেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে। দেশের বিভিন্নস্থানে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। প্রতিবছর অভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। এবছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তর কতৃক প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে- "প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি"। কিন্তু অতি দুঃখজনক হলেও সত্য বটে আমরা আমাদের পরিবেশকে সংরক্ষণেরর তুলনায় অধিকহারে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছি। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করতেছি। বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত করছি। পরিবেশ মানবজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। বেঁচে থাকার জন্য যে সুস্থতার প্রয়োজন পরিবেশ তা ক্রমেই হারিয়ে ফেলেছে আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা যদিও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক কিন্তু বর্তমানে তা কমে ১৬ শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
তাই মানবজীবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বনায়ন বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। গ্রীন হাউস ইফেক্টের করাল গ্রাস থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বৃক্ষ বা বনভূমি থেকে আমাদের প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তবে আমাদের যতটুকু বনভূমি থাকা প্রয়োজন ততটুকু বনভূমির অস্থিত্ব নেই বললেই চলে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এ দেশে বনভূমির পরিমাণ ছিল ২৪ শতাংশ কিন্তু বর্তমানে তা ১৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
শুধু বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নয়, বৃক্ষরোপন করার শপথ নিতে হবে সারা বছর। বৃক্ষরোপন করার উপযুক্ত সময় হলো জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত। কেননা এসময় প্রচুর বৃষ্টি হয়। মাটি ভেজা থাকে। মাটিতে প্রচুর উর্বরতা থাকে। তাছাড়া বৃক্ষ থেকেই পরিপূরক খাদ্য হিসেবে প্রচুর ফলমূল পাওয়া যায়। গৃহ ও জলযান নির্মাণ করতে, বিভিন্ন যানবাহন তৈরি করতে বৃক্ষের কাঠের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বিভিন্ন বনাঞ্চলের বৃক্ষ দিয়ে কাগজ মিলের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কাগজ তৈরি করে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রচুর লাভবান হচ্ছেন।
সর্বশেষ, বৃক্ষকে ভালোবেসে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি যদিও বর্তমান প্রজন্ম এমন কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছে। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের গেমস এবং নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। অধিহারে বৃক্ষ রোপন করার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলায়, জেলায় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বৃক্ষরোপন করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রজন্মকে বৃক্ষরোপণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে, খেলার মাঠের পাশে, বিদ্যালয়ের পাশে কিংবা নদীর পাড়ে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। এতে করে পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান এমন উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমেই সম্ভব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। তাই আসুন আমি, আপনি এবং সবাই গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই।
মো. আকিব হোসাইন
লেখক ও সংগঠক
© Deshchitro 2024