আশাশুনিতে চুই ঝালের দাম কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা এবং ক্রেতা কমেনি, বরং ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ঈদকে সামনে রেখে ছোট বড় হাটবাজারে চুই ঝালের রমরমা ব্যবসা ও চাহিদা বেড়েছে অনেক।
আশাশুনি অঞ্চলের মানুষের  মাংস রান্নায় চুই ঝালের অনুপস্থিতি যেন তৃপ্তিই মেটে না। আশাশুনির বিভিন্ন বাজারে চুই ঝাল বিক্রি  বৃটিশ আমল থেকে চালু আছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চল এ সুস্বাদু চুই ঝাল উৎপাদনের মূল কেন্দ্র। এটা মূলত: একপ্রকার লতা জাতীয় গাছ। কিছুটা ঝাল এবং সুস্বাদু ঘ্রাণ হওয়ার এর নাম হয়েছে চুই ঝাল। চুই ঝালের মূল ও কা-টাই শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এর কা-টা প্রকৃতির এমনই দান যে একটু তাপ পেলে তরকারির পাশাপাশি চুইঝাল নরম হয়ে যায়। পাহাড়ি এলাকায় চুই ঝালের উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র হলেও ঐ এলাকার মানুষ কিন্তু এই চুই ঝাল খেতে অভ্যস্ত নয়। সাতক্ষীরা,খুলনা এলাকার চুই, পাহাড়ি এলাকার চুই থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। স্বাদও আলাদা। একমাত্র দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ গরুর মাংস,খাসির মাংস সাথে চুই ঝাল মিশিয়ে রান্না করে থাকেন। শুধু তাই নয় সুস্বাদু ছোলার ঘুঘনির রান্নার সাথেও চুই ঝাল ব্যবহার করা হয়। যেন চুই ঝাল না হলে উল্লিখিত খাবারগুলোতে অতৃপ্তি থেকে যায়।ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাধীনতার পর বাজারে একমণ চুই ঝালের পাইকারি মূল্য ছিল ৮০ টাকা। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় অন্যান্য নিত্য দ্রব্য সামগ্রীর ন্যায় চুই ঝালের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি শুরু হয়। এরপর ‘৮৮ সালে ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০০ টাকা মণ বিক্রি হতে থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা এবং বর্তমানে চুই ঝালের(স্থানীয়) গুণগত মান অনুযায়ী পাইকারি মৃল্য মণ প্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা।আশাশুনির বাজারের একজন চুইঝাল ব্যবসায়ী মোঃ আলতাফ হোসেন। বয়স ৭০ বছর। বাড়ি আশাশুনির সোদকোনা গ্রামে। ৩০ বছরের যুব বয়সে বিবাহের পর পারিবারিক অভাব অনটনের মাঝে প্রতিবেশী একজন চুইঝাল ব্যবসায়ীর পরামর্শে চুইঝালের ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। সেই থেকে শুরু তাঁর এই ভিন্নধর্মী ব্যবসা।আগে নিজে যেয়ে চুই ঝাল সংগ্রহ করলেও এখন ব্যবসার ধরণ পাল্টিয়েছে। আড়ৎদারের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে দোকানে বসে চুই ঝাল সংগ্রহ করেন।বুধহাটা বাজারের অলিপ বিশ্বাস টোং দোকানে বিভিন্ন মুদি মালের সাথে চুই ঝাল বিক্রয় করেন।  তিনি বলেন চালানের মাধ্যমে ২০ থেকে ২৫ কেজি চুই ঝাল আনি। গুণগত মান অনুযায়ী ১ কেজি চুই ঝালের মূল্য ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ৪০ বছর ধরে এই ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে দিন যাপন করছি।সিদ্দিকুর রহমান টিটু নামের এক চুইঝাল চাষী বলেন, চুইঝাল মূলত একটি লতাগুল্ম গাছের শেকড় ও কাণ্ড। একটি গাছ থেকে পরিণত চুইঝাল সংগ্রহ করতে হলে গাছটি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। একটি গাছ বড় হতে প্রায় ছয় মাস থেকে বছরখানেক সময় লাগে। সেজন্য চুইঝালের দাম কিছুটা বেশি। কোরবানি উপলক্ষে চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে, পরিণত গাছের পরিমাণ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে।আশাশুনি কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, চুই গাছ দেখতে অনেকটা পানের লতার মতো। এর পাতায় ঝাল নেই। এর শিকড়, কাণ্ড বা লতা কেটে টুকরো করে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর কিছুটা গলে যাওয়া চুইয়ের টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। স্বাদের পাশাপাশি ঔষধিগুণ থাকায় দিন দিন চুইঝালের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।  জায়গায় কম খরচে অধিক আয় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে চুইয়ের। যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাতে ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক দুভাবেই এর চাষ বাড়ছে। ঘেরের আইলেও এর চাষ করছেন কেউ কেউ। হেক্টরপ্রতি এর ফলন ২ থেকে ৩ টন। ২ থেকে ৩ শতক জমিতে চুই লাগালে ৩-৪ বছরের মধ্যে ২-৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024