মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ

সাতক্ষীরার ভূমি অফিসের নিষেধাজ্ঞার পরও শহরতলীর কাশেমপুর বাইপাস সড়ক সংলগ্ন নাটাতলায় কৃষি জমির মাটি ও বালি কাটা বন্ধ হচ্ছে না। কৃষি জমির মাটি ও বালু কেটে হল্লা গাড়িতে ঝড়ের গতিতে ইটভাটায় ও বিভিন্ন স্থানে জলাশয়সহ পুকুর ভরাটের কাজে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। এতে মহাসড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। একইসাথে কাঁচা রাস্তা ও বাইপাস সড়কের উপর দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শতাধিক হল্লা গাড়ি মাটি বহনে নিয়োজিত থাকায় প্রায়শ ঘটছে দুর্ঘটনা।

 

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহে গেলে স্থানীয় কাশেমপুর এলাকার নাটাতলা বিলের কৃষক জামিরুল ইসলাম, আবদুল হান্নান, জিল্লুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, আজারুল ইসলাম, রিয়াসাত আলী, আজগার গাজী দোকানে বসে থাকা কাশেমপুরের আজিজার রহমান, ইয়াছিন আলী, বালিয়াডাঙ্গার রহমত আলী, আতার দোকানে বসে থাকা কাশেমপুরে নূর মোহাম্মদ, হোসেন আলী, বকচরার হেকমত আলীসহ স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাইপাস সড়কের পাশে জনৈক শুকুর আলীর ইটভাটার সন্নিকটে মাটি ব্যবসায়ি কাশেমপুরের মিনার আলীর পুত্র ও আবদুস সালাম, আবদুল বারীর ছেলে চায়ের দোকানদার আবুল হাসান, দক্ষিণপাড়ার মাটি ব্যবসায়ী জনৈক আনারুল ইসলাম, খোকন, শুকুর আলীর ছেলে মাহবুবুর সরদার, হল্লা গাড়ির ব্যবস্থাপক বাবুলিয়ার কামরুল ইসলাম আবারও বাইপাস সংলগ্ন শুকুর আলীর এবিবি ইটভাটার পাশে নাটাতলা বিলে টানা প্রায় এক মাস ধরে পাঁচটি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে প্রায় তিনশত বিঘা কৃষি জমির মাটি ও বালু কেটে হল্লা গাড়ি ভরাট করে সরু কাঁচা রাস্তার উপর দিয়ে বাইপাস সড়ক হয়ে ঝড়ের গতিতে নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি ও বালু শুকুর আলীর এবিবি ইটভাটা, লিয়াকত হোসেনের বিবি ইটভাটা, জাফর আলীর এসবিএল ইটভাটাসহ বিভিন্ন ইটভাটায় ও পুকুর ভরাটে কাজে নিয়ে যাচ্ছে।

 

তারা আরও জানান, কৃষি জমি থেকে মাটি ও বালু কাটার ফলে ও ইটভাটা স্থাপন করার কারণে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি ব্যাপক হুমকির মুখে পড়ছে। তাছাড়া হল্লা গাড়ি যেভাবে নাটাতলা বিলের মাটি বহন করে  ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে তাতে বাতাসে ধুলোবালি উড়ে এখানে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এই মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষি জমির মাটি কাটতে কাটতে এত গভীর করা হচ্ছে যে বর্তমানে তারা কৃষি জমি থেকে বালু তুলছে। এতে ঐ জমির পাশে থাকা কাঁচা রাস্তা বর্ষা শুরুতেই ভেঙে পড়বে। এরজন্য এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। বাইপাস সড়কের উপর দিয়ে হল্লা গাড়ির মাটি পড়ার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘটছে একের পর এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় আগরদাড়ী ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি প্রশাসনকে জানান।

 

সাতক্ষীরা জেলা নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আমার কাছে এ বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এনডিসিকে জানানোর পর তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর সদর ইউএনও'কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, "আপনারা থেকে বন্ধ দেন।" এরপর জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হলে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সরদার শরিফুল ইসলাম ঢাকায় আছেন বলে জানান। অবশেষে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার নির্দেশনায় ভূমি অফিসের লোকজন সরজমিনে গিয়ে ঐ অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি ও বালি কাটা বন্ধের নিষেধ করে আসেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পরও মাটি ও বালি কাটা বন্ধ করেনি তারা। তবে কৃষি জমির মাটি ও বালি কেটে বিক্রি এবং ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সুধীজনদের সাথে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে তিনি জানান।

 

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার কৃষকরা। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে রোববার  বিকালে জানানো হয়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমনা আইরিন সরেজমিনে রয়েছেন। তিনি বিষয়টি মনিটরিং করছেন। ইতোমধ্যে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত স্কেভেটর মেশিনটি জব্দ করা হয়েছে। রোববার সকালে বৃষ্টির কারণে এদিন মাটি ও বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024