|
Date: 2022-09-02 06:06:09 |
◾ নিউজ ডেস্ক
নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই লাগামহীন। চাল, ডাল, তেল, আটার বাইরে আলাদা করে অন্য কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাও কম। আর এই ফাঁকে নীরবে দাম বাড়ছে আরেক অত্যাবশ্যক পণ্য চিনির।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ৮০ টাকা কেজির খোলা চিনি এখন ৯০ টাকা। আর ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটজাত চিনি। এ অবস্থায় অত্যাবশ্যক ৯টি পণ্যের অংশ হিসেবে চিনির দামও বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
চিনির দাম বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও ব্যবসায়ীরা বসে নেই। বাজারে চিনির সরবরাহে ঘাটতি তৈরি করে তারা বাড়িয়ে চলেছে দাম।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাসেম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, দামও বাড়ছে।’
▪️বাজারদর
রাজধানীর বৃহৎ পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম এখন ৮৩ টাকা। দুই দিন আগে তা ছিল ৮৪ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ৮০ টাকার মধ্যে ছিল চিনির দাম। দুই মাস আগে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
তবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৯০ টাকায় উঠে গেছে। কারওয়ান বাজারে খোলা চিনির কেজি ৯০ থেকে ৯২ টাকা। আর প্যাকেট করা প্রতি কেজি চিনির দাম ৯৫ টাকার বেশি।
অলিগলির দোকানে ইচ্ছামতো নেয়া হচ্ছে চিনির দাম। অনেক দোকানে চিনি মিলছে না। দোকানিরা বলেন, ‘চাহিদামতো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে, দাম বেশি।’
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, ‘এক মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা।’
▪️টিসিবির তথ্য
সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা।
এক মাস আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৮ ভাগ। টিসিবি বলছে, এক বছর আগে এই সময়ে এক কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। ২০২১ সালের শুরুতে এক কেজি চিনির দাম ছিল ৬৫ টাকা। পরবর্তী সময় ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭০ টাকা। পরে গেল ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন-বিএসএফআইসি আরও ৫ টাকা দাম বাড়িয়ে করে ৭৫ টাকা।
▪️মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে
চিনির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্য কারণও উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং শুল্ক সুবিধা না থাকায় চিনির দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি তাদের।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত চিনি পরিশোধনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে নিজস্ব কারখানায় পরিশোধন করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে আসছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের চিনি পরিশোধনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দেরিতে মূল্য পরিশোধের সুবিধা নিয়ে ঋণপত্র খোলার পর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ঋণপত্র বা এলসি খোলার সময় এক ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৩ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু দেরিতে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে এক ডলারে ১১৫ টাকা পর্যন্ত বিনিময়মূল্য নিচ্ছে। আগে আমদানি শুল্ক ছিল টনপ্রতি ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকার মধ্যে। এখন প্রতি টন চিনির বিপরীতে ২৮ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকা শুল্ক গুনতে হচ্ছে। ফলে প্রতি টন চিনির (পরিশোধনের পর) মিল গেটে দাম পড়ছে এক লাখ থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। সে হিসাবে মিল গেটে মণপ্রতি দাম পড়ছে ৩ হাজার ৭০৩ থেকে ৩ হাজার ৮৮৮ টাকা। কিন্তু বর্তমানে মিল গেটে প্রতি টন চিনি ৭৮ হাজার ৩০০ থেকে ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সে হিসাবে মণপ্রতি দাম পড়ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯২০ টাকা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি না করলে লোকসান বেড়ে কারখানাগুলো দেউলিয়া হবে। লোকসানের পরিমাণ কমাতে পরিশোধিত চিনি অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদন খরচ মূল্যে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই।
▪️চিনির দাম বেঁধে দিচ্ছে সরকার
ট্যারিফ কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, অত্যাবশ্যক ৯টি পণ্যের মূল্য বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই তালিকার মধ্যে চিনিও রয়েছে। চিনির দামও নির্ধারণ করা হবে। চিনির আমদানি মূল্য, উৎপাদন ব্যয়, ডলার মূল্য ও শুল্ক হার পর্যালোচনা করে দাম নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
অত্যাবশ্যক পণ্য বিপণন আইন অনুযায়ী এই পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা এত দিন করেনি ট্যারিফ কমিশন।
© Deshchitro 2024