|
Date: 2022-08-30 01:21:10 |
◾ নিউজ ডেস্ক
ইলিশ আহরণের ভরা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুর উৎপাত বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মৎস্যজীবীরা। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির শিথিলতার কারণে সাগরের বিভিন্ন চ্যানেলে জলদস্যুরা মাথাচড়া দিয়েছে। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছেন জীবিকার তাগিদে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিশারিঘাট মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সামুদ্রিক মাছ বিশেষ করে ইলিশ আহরণের ভরা মৌসুমে সাগরে জলদস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। বিষয়টি আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে এমনিতেই আশানুরূপ ইলিশ আহরণ না হওয়ায় দাম কমছে না। তার ওপর জলস্যুদের উৎপাত পুরো মৎস্যখাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু প্রশাসন জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় যতটা উৎসাহ দেখায় সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ততটা উদাসীনতার পরিচয় দেয়। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’
◾যা ঘটেছে
চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিশারিঘাট মৎস্য সমবায় সমিতির এই নেতা জানান, গত ২৬ আগস্ট রাতে বঙ্গোপসাগরের হাতিয়া সন্দ্বীপ চ্যানেলের মাঝামাঝি কালিরচর এলাকায় মাছ ধরার নয়টি ট্রলারে হানা দিয়েছে জলদস্যুরা। এ সময় জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কোটি টাকার ইলিশ, জেলেদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। লুট শেষে ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল করে ডিজেল নিয়ে যায় জলদস্যুরা।
এর আগে গত ২৮ জুলাই বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ১০টি ট্রলারে হানা দেয় জলদস্যুরা। এ সময় আহরিত মাছ, ট্রলারের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় তারা। শেষে ট্রলারের ইঞ্জিনে ভাঙচুর চালায়। জেলেরা বাধা দিলে তাদের মারধর করা হয়।
২০১২ সালে সুন্দরবনের জলদস্যুতা দমনের জন্য সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অর্ধশত জলদস্যু নিহত হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতেও চিহ্নিত কয়েকজন জলদস্যু সর্দার কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান। এ সময় বাঁশখালী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপর পাঁচ শতাধিক জলদস্যু ৪৭০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ২২ হাজার গুলিসহ র্যাবের কাছে আত্নসমর্পণ করেন।
◾যা বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
কোস্টগার্ড পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ আলম বলেন, ‘সাগরে দস্যুতার অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা সাগরে জেলেসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। আশা করি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমরা লুটতরাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।’
নৌপুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের মতো বিশাল জলরাশিতে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট ও সক্ষমতা এখনও পরিপূর্ণ নয়। যে কারণে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে জলদস্যুদের অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। সাগরে জলসীমা নিরাপদ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
সামুদ্রিক মৎস্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, উপকূলে সংঘবদ্ধ জলদস্যু চক্রের সদস্যরা ভারী অস্ত্র নিয়ে সাগরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজ ও ফিশিং ট্রলারে হানা দিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। গত বছর কেবলমাত্র পূর্বাঞ্চলেই শতাধিক ফিশিং ট্রলারে লুটতরাজ চালানো হয়েছে।
© Deshchitro 2024