শিবলী মোস্তফা খান 


পিন্টু, বল্টু ও সাল্টু তিন বন্ধু। ক্লাস ফাঁকি দেয়া থেকে শুরু করে তামাক কিংবা অন্য মাদকদ্রব্য সেবন, তাদের সম্পর্কের জুড়ি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সূত্র ধরেই পরিচয় তবুও এমন মধুর সম্পর্ক যেন পাপের দরিয়ায় কত যুগ থেকে তারা একসঙ্গে ভেলা ভাসিয়ে যাচ্ছে। তাদের দলনেতা অবশ্য বল্টু, জাতে পাষণ্ড, লম্বা কুঁকড়ানো চুল আর দীর্ঘদেহী। পেশাদারী মনোভাব প্রকাশ করলেও মাদকের জগতে এরা পেশাদার না, অন্তত স্কুল-কলেজে তো তারা এসবে অভ্যস্ত ছিলেন না-ই। বল্টুদের ঘনিষ্ঠতা দেখে ক্লাসের অনেকেই ঈর্ষান্বিত; তাদের আনন্দ উল্লাস, হৈ হুল্লোড় আর দুষ্টুমিপানা’তেই শ্রেণিকক্ষ যেন স্বর্গীয় উল্লাসে মত্ত থাকতো। সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই বল্টুদের দলে যোগ দিলো, তাদের মনে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত আনন্দ ওদের দলেই নিহিত। কিন্তু একদিন একটা কান্ড ঘটে গেলো বল্টুদের গ্রুপে।


শ্রাবণ মাসের তপ্ত দুপুরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ডিজিটাল মার্কেটিং পাঠ নিচ্ছিলেন এক জাঁদরেল প্রফেসর। প্রফেসরের লেকচারে মন বসছিলো না বল্টুর, তাই পিন্টু ও সাল্টু কে ইশারা দিলো তিনি, পিন্টু ইশারা বুঝলেও সাল্টু ঠিক বুঝলো না, আসলে সাল্টু তো তাদের জগতের নতুন কমরেড, তাই দ্বিতীয়বারে এবার পিন্টুর সংকেতে সাল্টু স্পষ্ট হয়, ওয়াশরুমে যেতে হবে, তামাক সেবনের সিগন্যাল, কিন্তু শরীর সাঁয় না দেয়ায় সাল্টু ক্লাসেই অবস্থান করে। অপেক্ষা না করে পিন্টূ ও বল্টু চিপিংয়ে একজন করে বেরিয়ে পড়ল। অবশ্য তাদের দলের নতুন কমরেড মানে অন্য সহপাঠী গুলোও বুঝে ফেললো; আরও দুই তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্গীয় সুখ লাভের আশায় তাদের সঙ্গ ধরলো । স্যার, জাঁদরেল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকার্যক্রমে শিথীলতার ব্যাপারটা ভালো বোঝেন। তাই বল্টুরা নজর কাঁড়ে নি তার, নিতান্তই প্রাকৃতিক ডাক ভেবে এড়িয়ে যান। দলবেঁধে ওয়াশরুমের পরিবেশটা আনন্দমুখর করে ফেললো, হৈ হুলোর আর ইচিং বিচিং শব্দে। ওয়াশরুমের প্রায় কুঁড়ি হাত দূরে থাকা কেরানী ভাবতে থাকলো, ‘পাক, পাককারী, বিচ, মাদার’ এগুলো না জানি কত উচ্চবাচ্য! এই শব্দ গুলো গ্রামের অসভ্য সমাজে সে শোনে নি-যদি শুনতো তবে হয়ত কেরানীর কাপড়ে তাকে থাকতে হতো না। কি যেন এক কাজে হঠাত বল্টুদের চেয়ারম্যান স্যার করিডোর দিয়ে বিচরণ করছিলেন, বল্টুদের আওয়াজ তার দৃষ্টি এড়ায় না, বল্টুদের অনেকে বেরিয়ে আসে আর ধরা পড়ে যায়। চেয়ারম্যান স্যারের অগ্নি চক্ষুর ধাঁরে বল্টু, পিন্টু এবং অন্য নতুন কমরেডদের মাথা নিচু হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে বল্টুর হাতে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগারেট টা ছিলো।

স্যার জিজ্ঞেস করে,

-তোমার হাতে এইটা কি?

স্পটভাষী বল্টু অনেকটা ভয়ে আর বাধ্য ছেলের মত বলে- এইটা ভেইপ স্যার। 

চেয়ারম্যান স্যার তাদেরকে করিডোরে আটকে না রেখে দপ্তরে নিয়ে যায়। তারপর প্রশ্ন করা হয়, “ এই ভেপটা কার থেকে নিয়েছো?”


বল্টু উত্তর দেয়-

এইটা সাল্টুর স্যার।

স্যার এইবার সাল্টুকে প্রশ্ন করে ভেইপটার ব্যাপারে; কিন্তু সাল্টু তা নাকোচ করে দাবি করে ভেইপটা পিন্টূর।


অথচ প্রকৃতপক্ষে ভেইপটা সাল্টুরই ছিলো। চেয়ারম্যান স্যার এইবার পিন্টুকে ডেকে এনে কী কী যেন বললো, কিন্তু রুম থেকে বেরোতেই সে কি কান্না জুড়ে দিলো। এমন মুহূর্তের পূর্বাভাস তো তার স্বপ্নেও ঘটেনি, পানি না ছুঁয়েই পুকুর চুরির অপবাদ! তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা দুই বন্ধু মিথ্যে অপবাদে জড়িয়ে দিলো, দোষের ভাগ নিতে চাইলো না। স্বর্গীয় উল্লাস ফেটে অনিশ্চিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো সাল্টুর। অবশেষে সাল্টু বুঝতে পারল, পাপের জগতে কেউ দেয় না রে বন্ধুত্বের পরিচয়। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024